৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাজুল ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ গেরিলা বাহিনীতে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষে নয় মাস পর দেশে ফিরে আসেন। শ্রদ্ধেয় মুস্তারী শফীর বই ‘স্বাধীনতা আমার রক্ত ঝরা দিনগুলোতে’ পড়েছি আগরতলায় ক্রাফটস হোস্টেলে কিভাবে উনার ছেলে মেয়েদের প্রিয় মামা হয়ে উঠেছিলেন তাজুল। যুদ্ধ শেষে মতলবে ছাত্র ইউনিয়নকে দাঁড় করাতে উঠে পড়ে লেগে গেলে তাজুল।
বাংলাদেশের স্বৈরাচার পতন এবং গণতন্ত্র মুক্তির একজন সৈনিক হিসেবে লিপ ইয়ার থাকার কারণে প্রতি বছর ১লা মার্চ নিভৃতেই তার নাম স্মরণ করা হয় ।
প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় নিছক একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার সব রকম সুযোগ ছিলো তাজুলের। কিন্তু তিনি সে পথে পা বাড়াননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সর্বোচ্চ ডিগ্রি থেকে সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি ‘নিরাপদ জীবন’ উপহার দিতে পারতো। কিন্তু তিনি সচেতনভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছেন সেই ‘নিরাপদ জীবনে’র হাতছানি, আত্মপ্রতিষ্ঠার সকল সুযোগ। বেছে নিয়েছেন যথার্থ বিপ্লবীর জীবন। যে জীবন ভোগের নয়, ত্যাগের। যে জীবন শুধু আপনার জন্য নয়, মানুষের জন্য নিবেদিত। কমরেড তাজুল অবতীর্ণ হয়েছিলেন সমাজ বিপ্লবের প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করার যুদ্ধে।
শহীদ কমরেড তাজুল ইসলামের জন্ম মন্বন্তরের বছর, বাংলা ১৩৫০ সালে। চাঁদপুর জেলার মতলব থানার, বাগান ইছাখালি গ্রামে। তাঁর পিতা মিয়া মোহাম্মদ আবদুল করিমের সংসার সাধারণ কৃষক গৃহস্থের। কৈশোরে তাজুলের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল । ছোটবেলা থেকেই তাজুল খুব মেধাবী ছিলেন। পড়ালেখার দিকে তার আলাদা আকর্ষণ ছিল।
এসএসসি পাস করার পর রাজধানীতে এসে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৬৮ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্তনীতি বিভাগে বি.এ. অনার্সে ভর্তি হন। থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। ঐ ছাত্রাবাসে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় কর্মী হিসেবে তিনি পাকিস্তানী স্বৈরাশাসনবিরোধী ছাত্র গণআন্দোলনে স্বীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন গোপন কমিউনিস্ট পার্টি সংস্পর্শে আসেন এবং শ্রমিক-কৃষক মেহনতী জনগণের শোষণমুক্তি তথা সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে আত্মনিয়োগের শপথ গ্রহাণ করেন।
মার্চ ১৯৭৫। জগন্নাথ হলের খেলার মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটি বনাম মহানগর কমিটির মধ্যে খেলা।ছবিতে সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক, শহীদ তাজুল ইসলাম, কাজী আকরাম হোসেন, শহীদুল আলম বাদল ও মাহফুজুল হক বজলী এবং হারুন । এরা সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা
১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানবমুক্তির সংগ্রামের শহীদ কমরেড তাজুল ইসলামকে স্বৈরাচারী এরশাদের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডারা নির্মমভাবে হত্যা করে।
৫ম ও ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লায় প্রথম হয়েছিলেন। ৭ম শ্রেণিতে থাকতেই তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে মতলব হাইস্কুল থেকে তিনি লেটারসহ এসএসসি পাস করেন।